× Warning! Check your Cooke | Total Visitor : 86840

বিশেষ প্রতিবেদন

Published :
08-09-2020 । 03:01:50pm

Total Reader: 447



সাড়া ফেলেছে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ


স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের বাসিন্দা কমেলা বেগম (৪৫)। বিকেলে বাড়ির সামনে উঠোনে লাগানো সবজি গাছের যত্ন নিচ্ছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, সারাদিন কাজ শেষে বিকেলে যে অবসরটুকু পান তা তিনি বাড়ির আঙিনায় সবজির চারা লাগিয়ে ও তার যত্ন নিয়ে পার করেন। আসছে শীত কাল; তাই তিনি বাড়ির উঠোনে শিম, টমেটো, বেগুন, পালংশাকসহ শীতকালীন নানা সবজির চারা লাগিয়েছিলেন। গাছগুলো এখন বড় হয়েছে, ফুলও আসতে শুরু করেছে। শীত আসার আগেই ফলন পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

কমেলা বেগমের মতো রাজশাহীর প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ পরিবারের নারীরাই বাড়ির আঙিনায় এখন সবজি চাষ করেন। কেউবা এবিষয়টিকে সৌখিনতার পর্যায়ে নিয়েছেন; আবার কেউকেউ পরিবারের সবজি চাহিদা মেটানোর জন্যও করে থাকেন।

কমেলা বেগম জানান, আগে শীত পড়ার পর এই সবজিগুলো বাজারে পাওয়া যেতো। তবে এখন স্থানীয় বিভিন্ন নার্সারিতে আগাম জাতের সবজির চারা ও বীজ পাওয়া যায়। যা থেকে শীত আসার আগেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে। শীতের সবজির একটা সমস্যা তুলে ধরে তিনি জানান, সবজি গাছে পোকা ধরা একটা প্রচলিত সমস্যা। তবে শুরু থেকেই যত্ন নিলে ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

তবে আগাম জাতের সবজি চাষ এই অঞ্চলে শুধু পারিবারের উঠোনেই সীমবদ্ধ নেই। দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় এখন রাজশাহী অঞ্চলের স্থানীয় অধিকাংশ কৃষকরাই তাদের জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ করছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিম, টমেটো, বেগুন, পালং শাক, গাজর ইত্যাদি শীতকালীন সবজি। শীতকালীন আগাম সবজি রাজশাহীর মানুষের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃীষ জমি থেকে বর্ষার পানি নামতে শুরু করার সাথে সাথেই এখন সবাই আবাদে নেমে পড়েছে। রাজশাহীর কৃষি জমিসহ বাড়ির আনাচে কানাচের টুকরো জমিগুলোতেও এখন শুধুই সবুজের সমারোহ। আসছে শীতকে সামনে রেখে স্থানীয় প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবার ও কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজশাহীর উর্বর জমিতে শুধু সবজি দানা ফেললেই গজিয়ে ওঠে চারা। আর এখনতো সার, বীজসহ কৃষি পরামর্শ সবই হাতের মুঠোয় অর্থাত বাড়ির কাছেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে আগাম সবজির আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে আগাম জাতের শিম উল্লেখযোগ্য।

এদিকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের নতুন শিম। আগাম জাতের শিমের ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এ শিমের আবাদ কৃষকদের কাছে ভাদ্রা শিম (ভাদ্র মাসের শিম) নামে পরিচিত। কৃষকরা জানিয়েছেন শিমের পোকা দমন করতে গিয়ে লাভের একটি অংশ চলে যায়। আগাম জাতের শিমগুলো কার্তিকা, কাজলা ও চালতা নামে পরিচিত। সবুজ পাতার মধ্যে লক লক করছে শিমের শীষ। আর শীষে ধরে আছে বেগুনি ও হালকা সাদা ফুল। আর কিছু কিছু শীষে উকি দিচ্ছে তরতাজা শিম। আগাম জাতের শিমের আবাদের জন্য জৈষ্ঠ্য মাসে জমি প্রস্তুত করে রোপন করতে হয়।

নওগাঁ সদর উপজেলা বর্ষাইল ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের চাষী আজিজার মন্ডল বলেন, তিনি ৮ কাঠা জমিতে ভাদ্র্রা জাতের শিমের আবাদ করেছেন। এ পরিমাণ জমিতে শিমের আবাদ করতে তার প্রায় বাঁশ চার হাজার টাকা, নিড়ানি খরচ এক হাজার, ঔষধ ৮শ টাকাসহ প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আগাম জাতের শিম পাবো বলে জৈষ্ঠ্য মাসে লাগানো হয়েছে। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত শিম উঠানো হবে। আগামি ৮-১০ দিনের মধ্যে শিম উঠানো শুরু করবো।

প্রথম দিকে শিম সাড়ে তিন থেক চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। যখন শিম উঠা শুরু হয় তখন দাম একটু কম হয়। তারপরও সর্বনিম্ন ৪শ থেকে ৫শ টাকা মণ বিক্রি হয়। প্রতি সপ্তাহে এক মণ করে শিম উঠবে। সে হিসেবে মাসে চার মণ। আর দাম পাওয়া যাবে প্রায় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

কেশবপুর গ্রামের চাষী সিরাজ বলেন, গত চারদিন আগে ক্ষেত থেকে পাঁচ কেজি শিম তুলেছেন। পাইকারী বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা কেজি। বাজারে শিমের পরিমাণ কম হওয়ায় দামও তুলনামুলক বেশি। আর ভাল দামের আশায় আগাম জাতের শিমের আবাদ করা হয়। ঝিকড়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন ও আবুল কাশেমসহ কয়েকজন বলেন, তারা আগাম জাতের লাল শিমের আবাদ করেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিম উঠা শুরু হবে। তবে এবারে ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে শিম গাছ পঁচে যাওয়া কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আশা করছেন ভাল দাম পাবেন।

কৃষি কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বর্ষাইল, র্কীত্তিপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে। ধানের পরিবর্তে তারা বেশি লাভের আশায় সবজির আবাদ করে থাকেন। আগাম শিমের আবাদ করায় কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পানি নামতে শুরু করেছে। সেসব এলাকায় সবজির বীজের প্রনোদনা দেয়া হবে।

এসংক্রান্ত আরো সংবাদ : ফিচার




একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চার পাশে ঘটে যাওয়া সংবাদ উপযোগী যে কোন ঘটনার ছবি বা ভুক্তভোগী ও সম্পৃক্তদের মোবাইল নম্বর আমাদের পাঠাতে পারেন।

সম্পাদক : রাজু আহমেদ

বার্তাকক্ষ
এসোসিয়েশন ভবন
৬১০০, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
newsdailyrajshahi@gmail.com
call@ 01750142903